বাংলার পাল শাসন সম্পর্কে বর্ণনা
বাংলার পাল শাসন সম্পর্কে বর্ণনা | Description of the Pala rule in Bengal

বাংলার পাল শাসন
শশাঙ্কর মৃত্যুর পর বাংলা প্রদেশ গুলির মধ্যে ৬৩৭ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে অভ্যন্তরীণ, কোলাহল, অরাজকতা, সীমাহীন নৈরাজ্যবাদ মৎস্যান্যায় নামে পরিচিত। দীর্ঘ অরাজকতার অবসানে বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতি ও প্রগতির এক নবযুগের সূচনা হয়। খলিমপুর তাম্রফলক থেকে জানা যায়, বাংলার বুক থেকে চরমতম নৈরাজ্য দূর করে দেশে শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, গোপালকে সমগ্র বাংলার রাজা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পালযুগে পালি এবং প্রাকৃত ছিল প্রধান ভাষা।
গোপাল-
গোপাল পাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। পাল রাজারা নিজেদের সূর্যবংশীয় বলে দাবি করেছেন। তিব্বতীয় পন্ডিত লামা তারানাথ তাদের ক্ষত্রিয় বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে গোপাল হলেন ওডোন্টপুরী মহাবিহারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিলেন। দেশের কল্যাণের জন্য সামন্ত নৃপতিগণ স্বেচ্ছায় তাদের কর্তৃত্ব ত্যাগ করে গোপালকে তাদের রাজা বলে মেনে নিচ্ছেন- এই ঘটনাকে ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার রক্তপাতহীন বিল্পব বলেছেন।
ধর্মপাল-
গোপালের মৃত্যুর কথা সুযোগ্য পুত্র ধর্মপাল সিংহাসনে বসেন। আলিমপুর চানু ফলকে ধর্ম করে রাজত্বকাল সম্পর্কে বর্ণনা করা আছে। সিংহাসনে বসার পরেই তিনি প্রতিহার ও দক্ষিণাত্যে রাষ্ট্রকূট বংশের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হন। মূলত এই ত্রিশক্তি সংগ্রাম উত্তর ভারতের রাজনৈতিক শূন্যতার জন্য তৈরি হয়েছিল। রাষ্ট্রকূট রাজকন্যা রান্না দেবীকে ধর্মপাল বিবাহ করেন। গুড জয়ের প্রতিহার দের দুবার পরাজিত করেন কিন্তু পতিহার বংশ রাজার দ্বিতীয় নাক ভট্ট কোন উইল দখল করেন এবং ধর্মপাল কে পরাজিত করেন। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রকূট রাজ তৃতীয় গোবিন্দ আর্যাবর্তে এসে নাক ভট্ট কে পরাজিত করেন। কোন যে সিংহাসন থেকে ইন্দ্র রাজা কে বিতাড়িত করেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি মগজের বিক্রম শিলা মহাবিহার এবং সম্পুরি বিহার স্থাপন করেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার করেন।
দেবপাল-
ধর্মপালের মৃত্যুর পর দেব পাল সিংহাসনে বসেন। তিনি উৎকল হন গুড জর দ্রাবিড় এবং বুঝতে পরাজিত করেন এবং প্রাক জ্যোতি স্কুল বা কামরূপের রাজা বিনা যুদ্ধে তার বর্ষতা মেনে নেন। বর্তমান কালের আসাম ওড়িশা জয় করে তিনি তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। নালদা বিশ্ববিদ্যালয় তার পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করে এবং তার চেষ্টার আনন্দ বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ধর্ম এবং সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত হয়। জাভা ও সুমাত্রার শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজা বল পুত্র দেব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৌদ্ধমা প্রতিষ্ঠার জন্য এর কাছে পাঁচটি গ্রাম ভিক্ষে করেন এবং দেবতা মঞ্জুর করেছিলেন। পাল বংশের সবথেকে শক্তিশালী রাজা ছিলেন দেবপাল। আরো পর্যটক সুলেমান দেবপালের সময় বাংলায় আসেন এবং পাল বংশকে তিনি রুমি বলে অভিহিত করেন। দেবপালের রাজ্য সভাপতি প্রযুক্ত অলংকৃত করছেন। নেপালের পর তার ভাতৃত্ব বিবাহ বাল সিংহাসনে বসেন।
নারায়ণ পাল-
নেপালের মৃত্যুর পর বিগ্রহ পাল সিংহাসনে বসেন। তারপর সিংহাসনে বসেন নারায়ন পাল। ভাগলপুর লিপি থেকে নারায়ন পালের ১৭ বছরের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায়। তিনি মুদাগিরির অন্তর্গত টিরাভক্তি গ্রামে ১০০০ শিব মন্দির ও মোট নির্মাণ করেন। বিগ্রহ পাল ও নারায়ণ পাল উভয় ছিলেন যুদ্ধবিমুখ শান্তি প্রিয় ধর্ম প্রিয় সংসার বিমুখ ও অকর্মণ্য।
মহিপাল -I-
মহিপাল দ্বিতীয় বিগ্রহ পালের পুত্র। তাকে পাল বংশের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তার আমলে সর্বাপেক্ষা উল্লেখ জনক ঘটনা হলো চোল রাজার রাজেন্দ্র চলে নেতৃত্বে দুই বছর ব্যাপী বাংলার উপর চোল আক্রমণ দমন করা।
মহিপাল -II-
মহিপাল দ্বিতীয় এই রাজত্বকালে দিববার নেতৃত্বে প্রথম পরিপত্র বিদ্রোহ হয়।
রামপাল-
রামপাল কৈবর্ত বিদ্রোহ দমন করেন এবং এই বিদ্রোহের নেতাকে বন্দী করেন। সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিত হলো রামপালের জীবনী। তার উত্তর শরিরা হলেন কুমার পাল তৃতীয় গোপাল এবং মদন পাল। এরা দুর্বল শাসক ছিলেন। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পাল সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয়। তার আমলে দুজন জনপ্রিয় ভাস্কর হলেন ধিমান ও বিত পাল। জিম উদবাহন এই সময় রচনা করেন দায়ভাগ। দ্বিতীয় মহিপালের আমলে পরিবর্তন বিদ্রোহ শুরু হয় তখন বৃদ্ধ হয়ে নেতা ছিলেন দিব্যোগ রামপালের আমলে পরিবর্তন ভীম। শান্তরক্ষিত ছিলেন তার সমসাময়িক বৌদ্ধ পরিব্রাজক এবং পন্ডিত।