ডিপি মুখার্জিকে অনুসরণ করে ব্যক্তিত্ব ধারণাটির ব্যাখ্যা দাও।
ডিপি মুখার্জিকে অনুসরণ করে ব্যক্তিত্ব ধারণাটির ব্যাখ্যা দাও।

ডিপি মুখার্জির সমাজতত্ত্বের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হল ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অনুধাবন করা। তাই Personality in the social Sciences – কন্ঠে একদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে অন্যদিকে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমালোচনা করে বিষয় এবং বিষয়ীর সমন্বয়ে ব্যক্তিত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
তিনি ব্যক্তির বিষয় গত দিক তার চিন্তার এবং বিষয়গত দিক বলতে কর্মের জগতকে নির্দেশ করেছেন। পাশ্চাত্য তাত্ত্বিকণ যেখানে কেবল বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন তিনি সেক্ষেত্রে বিষয় ও বিষয়ের সম্পর্কের গতিশীল ধারাকেই ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করেছেন। এই প্রসঙ্গে ব্যক্তির থেকে পুরুষকে পৃথক করে বলেন সকল পুরুষই হল ব্যক্তি কিন্তু সকল ব্যক্তি পুরুষ নয় – কেবল যুক্তিবাদী ব্যক্তি রায় হলো পুরুষ। অর্থাৎ বিশ্বজনীনতা সম্পর্কে সচেতনা যুক্ত রাই হলো পুরুষ এবং ব্যক্তিসত্তার বিবর্তন বা বিকাশের নির্দিষ্ট পর্যায়ে উপনীত হলেই তবেই এই চেতনার বিকাশ ঘটে এবং ইহা প্রয়োজন।
তিনি ব্যক্তিত্বের ব্যাখ্যায় অহংবোধ আক্য এবং ব্যক্তি উপাদান তিনটির উল্লেখ করেছেন যেগুলির মাধ্যমে বিশ্ব ও অন্যান্যদের পাশাপাশি ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক বজায় থাকে। অর্থাৎ এই ভাবেই ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়।
তার মতে মানব আচরণে বংশগত গুণাবলী এবং উত্তেজক কোনোটিই একক প্রভাব প্রতিফলিত হয় না বরং উত্তেজক আধ্যাত্বিক শক্তি ও আরাধনার পাশাপাশি নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ইচ্ছা শক্তি ও অতীত অভিজ্ঞতা ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে ব্যক্তি ভেবে প্রতিক্রিয়া মূলক আচরণে তারতম বর্তমান।
তার দাবি গোষ্ঠীর বিশ্বাস মূল্যবোধ নিয়ম নীতি- আদর্শ প্রথা ও প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সাথে একাত্মতার কারণে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে যা ব্যক্তিকে বিমুর্ত ও খণ্ডাংস থেকে মুহূর্ত ও পূর্ণাঙ্গের স্তরে উত্তরণের সাহায্য করে। তিনি আরো বলেন ব্যক্তিত্বের সাথে স্বাধীনতার সম্পর্ক আছে জেঠির দ্বারা অযৌক্তিক আচরণ ও চিন্তাধারা বা বেআইনি কার্যকলাপ থেকে আত্ম সংযমকে নির্দেশ করেছেন যা নির্দিষ্ট প্রবাহের মাধ্যমে আসে। অবশ্য বাস্তবে স্বাধীনতার অর্থ হলো যান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা। আর ব্যক্তি যখন স্বাধীন ভাবে তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারবে তখনই ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটবে।
তার মতে ধীরগতিতে হলেও ব্যক্তিত্ব গতিশীল তাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পরিবাহিত হয়ে থাকে। ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে যেহেতু সামাজিক এবং বংশগত উপাদানের প্রভাব থাকে তাই সামাজিক ও বংশানুক্রমিক অভিজ্ঞতা সমূহ সর্বোচ্চ সীমায় উপনীত হলে নতুন ঐতিহ্য জন্ম হয় যা ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে তোলে। এই প্রসঙ্গে সু সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের জন্য নৈতিক আগ্রহ এবং ভৌতিক চেতনা শক্তির সাথে যুক্তির শুদ্ধতা এবং ইতিহাস চেতনার সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
সর্বোপরি বলেন বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক চিন্তার জগতের মধ্যেকার প্রাচীরটি যখন দুর্বল হয়ে পড়বে তখন ব্যক্তিত্ব সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।