মুদালিয়র কমিশন বা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
মুদালিয়র কমিশন বা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন | Mudaliar Commission | Secondary Education Commission

মুদালিয়র কমিশন বা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
সভাপতি- ড. লক্ষণ স্বামী মুদালিয়র
সম্পাদক- ড. অনাথ নাথ বসু
মোট সদস্য- ৯ জন
ভারতী সদস্য- ৭ জন
বিদেশী সদস্য- ২ জন
মোট সুপারিশ- ১১৪টি
পৃষ্ঠা সংখ্যা- ৩১১টি
মুদালিয়র কমিশন (1952-1953) বা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
প্রথাগত শিক্ষার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল মাধ্যমিক শিক্ষা। কিন্তু প্রশ্ন হল রাধাকৃষ্ণন কমিশন (1948-49) তৈরী করা হয়েছিল, তাহলে কেন এত তাড়াতাড়ি মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের প্রয়োজন হয়? রাধাকৃষ্ণন কমিশন অনুভব করেছিল যে মাধ্যমিক শিক্ষা হল আমাদের দেশের দুর্বলতম দিক খুব তাড়াতাড়ি এর দুর্বলতা দূর করা প্রয়োজন। তাই এই মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ লক্ষণস্বামী মুদালিয়রের সভাপতিত্বে 1952 সালে 23 সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠন করে। মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন 9 জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ড. লক্ষন স্বামী মুদালিয়র তাই মুদালিয়র নাম অনুসারে এই কমিশনের নাম রাখা হয় মুদালিয়র কমিশন। তাঁরা দীর্ঘ 9 মাস পরিশ্রম করে 311 পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দেয়।
মুদালিয়র কমিশনের সদস্যবৃন্দঃ
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল 9 জন। এর মধ্যে ভারতীয় সদস্য ছিল 7 জন এবং বিদেশী সদস্য ছিলেন 2 জন।
ভারতীয় সদস্যগণ-
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের ভারতীয় সদস্যগণ ছিলেন-
- ড. লক্ষন স্বামী মুদালিয়র – সভাপতি
- ড. অনাথ নাথ বসু – সম্পাদক
- শ্রীমতী কে. এল. শ্রীমালী – সদস্য
- শ্রীমতী হংসরাজ মেহেতা – সদস্য
- শ্রী জে. এ তারপোর ওয়াল্য – সদস্য
- শ্রী এম টি ব্যাস – সদস্য
- শ্রী কে. জি. পইয়াদিন – সদস্য
বিদেশী সদস্যগণ-
বিদেশী সদস্য ছিলেন দুই জন যথা-
- কে. আর উইলিয়াম (আমেরিকা)
- জন শ্রিস্টি (ইংল্যান্ড)
মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য (Aims of Secondary Education)
মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে মুদালিয়র কমিশনের স্পষ্ট লক্ষ্য হল-
i) রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সুচিন্তিত এবং সুযোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা।
ii) দেশের কর্ম সম্পাদানের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি করা।
iii) শিক্ষার্থীরা যাতে রাষ্ট্রকে সুবিবেচনার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে তার উপযোগী করে গড়ে তোলা।
iv) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সে সৃষ্টিধর্মী ও সৃজনশীল ক্ষমতা রয়েছে তার বর্হিপ্রকাশ করতে পারে সেই উপযোগী বিদ্যালয় পরিবেশ গড়ে তোলা।
মুদালিয়র শিক্ষা কমিশনের গঠন-
- মুদালিয়র কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষা হবে প্রাথমিক শিক্ষা বা নিম্নবুনিয়াদি শিক্ষা রূপে। এখানে শিক্ষার্থীরা প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করবে। যার সময়সীমা হবে 4 অথবা 5 বছর।
- মুদালিয়র কমিশনের মরে মাধ্যমিক শিক্ষা হবে দুই রকমের যথা-
i) নিম্নমাধ্যমিক – সময়সীমা 4/3 বছর – পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি অথবা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
ii) উচ্চ মাধ্যমিকের সময়সীমা হবে 3 বছর – নবম থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত।
উক্ত আলোচনার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে মুদালিয়র শিক্ষা কমিশনের মতে শিক্ষা কাঠামো হবে-
৪+৪+৩ = ১১ বছর
বা
৫+৩+৩ = ১১ বছর
পাঠ্যক্রমঃ
মুদালিয়র কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম হবে বাস্তব ভিত্তিক। তাই বাস্তবতার দিক লক্ষ্য রেখে পাঠ্যক্রম রচনা করতে হবে। পাথ্যক্রমের মধ্যে থাকবে- ভাষা, সমাজ বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান এছাড়া মানবিক বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কৃষিবিদ্যা, চারুকলা, গ্রাহস্থ বিজ্ঞান ইত্যাদি।
মুদালিয়র কমিশন (1952-53) মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের সুপারিশ করেন। তার মধ্যে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হল বহুমুখী বা বহুউদ্দেশ্য সাধক বিদ্যালয় বা Multipurpose School স্থাপন করেন।
Multipurpose School এর সুপারিশ সমূহঃ
বহুমুখী বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-
i) শিক্ষার্থীদের নিজস্ব চাহিদা ও ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
ii) বহুমুখী বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অধিক সংখ্যক বৃত্তি ও কারিগরি বিদ্যালয়ের পরিচালনা করা।
iii) শিল্পকেন্দ্রিক এলাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে ব্যবহারিক শিক্ষা শিখতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
iv) দেশের প্রত্যেক রাজ্যে গ্রামীণ শিক্ষার বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থা করা।
শিক্ষণ পদ্ধতিঃ (Methods of Teaching)
গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন আধুনিক ও মনোবৈজ্ঞানিক শিক্ষা পদ্ধতির উপর জোড় দেন। শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদা ও আগ্রহ অনুসারে বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি শিখবে। তাই মাধ্যমিক বাস্তব জীবনের জন্য সামজস্যপূর্ণ।
এই কমিশনের বেশকিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও বলা যায়- মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অর্জন করে।