বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন | University Education Commission

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন
- সভাপতি- ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন
- সম্পাদক- ড. নির্মল কুমার সিদ্ধান্ত
- মোট সদস্য- ১০ জন
- ভারতী সদস্য- ৭ জন
- বিদেশী সদস্য- ৩ জন
- সুপারিশ সমূহ- ২০৭টি
- পৃষ্ঠা সংখ্যা- ৭৪৭ পৃষ্ঠা
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন (১৯৪৮-১৯৪৯) (University Education Commission)
ভারতবর্ষের শিক্ষার ইতিহাস একটি ধারাবাহিক স্রোতের মত। কিন্তু তার সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় এর মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তন স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তী মুহূর্তে দেখা যায়।
১৯৪৭ খ্রিঃ ১৫ই আগষ্ঠ ভারতবর্ষ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জয়লাভ করে। তার সালে ভারতে অর্থ, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতির বিশেষ অভাব পরিলক্ষিত হয়। খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার দিকে বিশেষ নজর রাখা হয়। তাই ভারতবর্ষের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে তার কথা বিবেচনা করে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের নেতৃত্ব বা সভাপতিত্বে স্বাধীন ভারবর্ষের প্রথম শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ করা হয়। তাই তাঁর নাম অনুসারে এই কমিশনের নাম রাখা হয় রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন (১৯৪৮-১৯৪৯)।
কমিশন গঠনঃ
ভারত সরকারের আদেশে ১৯৪৮ খ্রিঃ ৫ নভেম্বর ১০ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে এই কাজটি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুপারিশগুলি বিভিন্ন ভাবে আলোচনা পর্যালোচনা করার পর ২০৭টি সুপারিশ সম্বলিত ৭৪৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন ১৯৪৯ সালে সরকারের কাজে জমা দেওয়া হয়।
কমিশনের সদস্যবৃন্দঃ
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সদস্যদের আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। ভারতীয় এবং বিদেশী।
ভারতীয় সদস্যঃ
ভারতীয় সদস্য হলেন ৭ জন-
১. ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন – সভাপতি
২. ড. নির্মল কুমার সিন্ধান্ত – সম্পাদক
৩. ড. মেঘনাদ সাহা – সদস্য
৪. ড. তারাচাঁদ – সদস্য
৫. জাকির হোসেন – সদস্য
৬. এ লক্ষন স্বামী মুদালিয়র – সদস্য
৭. কমল নাবায়ন বহন – সদস্য
বিদেশী সদস্যঃ
রাধাকৃষ্ণন সদস্যের বিদেশী সদস্য হলেন ৩ জন। তাঁরা হলেন-
১. ড. জেমস এফ. ডাফ – সদস্য
২. ড. আর্থার ই মরগ্যান – সদস্য
৩. ড. জন টি গার্ট – সদস্য
কমিশনের বিষয়বস্তুঃ
রাধাকৃষ্ণন কমিশনে স্বীকৃত / বিচার্য বিষয়বস্তুগুলি তার কাছেন উল্লেখ করেন সেইগুলি নিম্নরূপ-
১. ভারতবর্ষে শিক্ষার জন্য উচ্চশিক্ষা ও গবেষনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্থির করা।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার মান রক্ষা করা।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যমে ভারতীয় দর্শন, কলা, সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি, চারুকলা, ইতিহাস ইত্যাদির জন্য গুণগত মানের শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাপুরুষদের জীবনী পাঠের সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৫. বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার বহুমুখী গবেষণার ব্যবস্থা করা।
উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিশনের মতে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ-
১. ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারতে নতুন ভাবে গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে দেশের শাসন ব্যবস্থা, রীতিনীতিকে ভিন্ন করা চলবে না।
২. দেশের নাগরিকের মধ্যে যাতে খুব সহজেই গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ও নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জনের ক্ষমতা গড়ে ওঠে সেই দিকে দৃষ্টি রাখা।
৩. ভারতের কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার হয় সেই দিকে দৃষ্টি রাখা।
৪.সামাজিক ন্যায় বিচারের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
৫. জাতীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আন্তজার্তিক শিক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সমাধান স্থাপন করা।
গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাঃ
স্বাধীনতার পর ভারতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার কারণে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষাথেকে বঞ্চিত হত। তাই কমিশন গ্রামের কেন্দ্রস্থলে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য চিন্তা করেন। এবং কমিশন আরও বলেন যে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হবে ডেনমার্কের জনতা কলেজের মতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কাঠামোঃ
উচ্চ শিক্ষার সুষ্ঠ পরিচালনা ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো তৈরী করা হয়।
a. ১২ বছরের শিক্ষালয়ের শিক্ষা অর্জনের পর শিক্ষার্থীরা মহাবিদ্যালয়ে কলা (Arts) বা বিজ্ঞান (Science) বিভাগে ভর্তি হতে পারবে।
b. Pan 3 Honours কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ বছরের ডিগ্রি চালু করা। এরপর অনার্স কোর্সের শিক্ষার্থীরা এক বছর এবং পাশ কোর্সের শিক্ষার্থীরা দুই বছর শিক্ষাগ্রহণের পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিতে পারবে।
উচ্চ শিক্ষার পাঠ্যক্রমঃ
রাধাকৃষ্ণন কমিশনে সুপারিশ করেন যে শিক্ষার্থীরা যাতে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য সৃজনশীল শিক্ষার সুযোগ পায়।